ভাষা কাকে বলে? ভাষা কত প্রকার ও কি কি ?

আজকের আর্টিকেলে আমরা ভাষা কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি ? এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

ভাষা কাকে বলে

ভাষা কাকে বলে?

ভাষা কাকে বলে – ভাষা হলো মানুষের ভাব ও অনুভূতির আদান-প্রদান করার একটি মাধ্যম। এটি একটি সিস্টেম যা শব্দ, বাক্য, গ্রামার, এবং অর্থের সংগঠনের মাধ্যমে যোগাযোগের কাজ করে। ভাষা মৌখিক হতে পারে (যেমন বাংলা, ইংরেজি) অথবা লিখিত হতে পারে (যেমন আদি লিপি বা ইলেকট্রনিক মেসেজ)। ভাষার মাধ্যমে মানুষ তাদের চিন্তা, ধারণা, সংস্কৃতি, এবং অভিজ্ঞতা একে অপরের সাথে ভাগ করে নেয়।

ভাষার বৈশিষ্ট্য

ভাষার কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে:

  1. সামাজিকতা: ভাষা মানুষের মধ্যে সামাজিক সম্পর্ক স্থাপন এবং যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি সমাজে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  2. প্রতীকীতা: ভাষার শব্দ ও বাক্য গুলি প্রতীক হিসেবে কাজ করে। অর্থপূর্ণ প্রতীকগুলো (শব্দ) ব্যবহার করে আমরা ধারণা এবং ভাবনা প্রকাশ করি।
  3. সীমাহীনতা: ভাষা সীমাহীন পরিমাণের বাক্য ও ভাবনা তৈরি করতে সক্ষম। একটি ভাষার নিয়ম এবং কাঠামো অনুসরণ করে নতুন নতুন বাক্য গঠন করা সম্ভব।
  4. আবেগ: ভাষা মানুষের আবেগ, অনুভূতি, এবং অভ্যন্তরীণ মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা প্রকাশ করতে ব্যবহৃত হয়।
  5. সংবিধিবদ্ধতা: ভাষার ব্যবহার নির্দিষ্ট নিয়ম এবং কাঠামোর অধীন। প্রতিটি ভাষার নিজস্ব ব্যাকরণ এবং সিনট্যাক্স থাকে যা তার ব্যবহার নির্ধারণ করে।
  6. বিকাশশীলতা: ভাষা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়। নতুন শব্দ, ধ্বনিগত পরিবর্তন এবং পরিবর্তিত ব্যবহার ভাষার বিকাশের অংশ।
  7. উচ্চারণ ও স্বর: ভাষার উচ্চারণ এবং স্বর বিভিন্ন হতে পারে, যা ভাষার অর্থ এবং ভাবনাকে প্রভাবিত করতে পারে।

এই বৈশিষ্ট্যগুলো ভাষার বিভিন্ন দিক ও তার কার্যকারিতা বোঝার ক্ষেত্রে সাহায্য করে।

ভাষার প্রকারভেদ

ভাষার বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে, এবং এগুলো বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য, ব্যবহার, এবং শ্রেণীবিভাগের ওপর নির্ভর করে। প্রধান প্রকারভেদগুলি হল:

  1. মৌখিক ভাষা: মুখের মাধ্যমে উচ্চারণ করা হয় এবং শ্রবণযোগ্য হয়। যেমন বাংলা, ইংরেজি, চীনা ইত্যাদি।
  2. লিখিত ভাষা: কাগজে, কম্পিউটারে, বা অন্য কোনো মাধ্যমের মাধ্যমে লেখা হয়। মৌখিক ভাষার লেখিত রূপ এটি।
  3. সংকেত ভাষা: ভৌগলিক বা সাংস্কৃতিক কারণে বিভিন্ন সংকেতের মাধ্যমে ব্যবহার হয়। উদাহরণস্বরূপ, ইশারা ভাষা (যেমন মার্কিন সাইন ভাষা)।
  4. সরল ভাষা: সাধারণ ব্যবহারিক ভাষা যা দৈনন্দিন জীবন এবং সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  5. প্রযুক্তি ভাষা: বিশেষ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত ভাষা, যেমন প্রোগ্রামিং ভাষা (যেমন পাইথন, জাভা), যা কম্পিউটার এবং অন্যান্য প্রযুক্তি দ্বারা ব্যবহৃত হয়।
  6. প্রাচীন ভাষা: ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে ব্যবহৃত ভাষা, যা এখন আর প্রাত্যহিক ব্যবহারে নেই। উদাহরণস্বরূপ, লাতিন, প্রাচীন গ্রীক ইত্যাদি।
  7. মৃত ভাষা: এমন ভাষা যা বর্তমানে কোনো সম্প্রদায় দ্বারা ব্যবহৃত হয় না, কিন্তু এক সময় গুরুত্বপূর্ণ ছিল। উদাহরণস্বরূপ, সনস্কৃত, হিব্রু (প্রাচীন রূপ) ইত্যাদি।
  8. নেটিভ ভাষা: যে ভাষাটি একজন ব্যক্তি তার জন্মগতভাবে শিখেছে এবং ব্যবহার করে।
  9. দ্বিতীয় ভাষা: যে ভাষা একজন ব্যক্তি তার মাতৃভাষার বাইরে শিখেছে এবং ব্যবহার করে।

এই প্রকারভেদগুলি ভাষার বিভিন্ন দিক এবং তার ব্যবহারিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে ধারণা দেয়

মৌখিক ভাষা

মৌখিক ভাষা হলো এমন একটি ভাষা যা মুখে বলার মাধ্যমে যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি মূলত কথোপকথন, বক্তব্য বা আলোচনা করার সময় ব্যবহৃত হয়। মৌখিক ভাষায় মানুষ সরাসরি মুখোমুখি অথবা ফোন, ভিডিও কল বা অন্য কোন প্রযুক্তির মাধ্যমে কথা বলে ভাব বিনিময় করে

মৌখিক ভাষা ২ প্রকার

১। আঞ্চলিক ও

২। সার্বজনীন ভাষা

আঞ্চলিক ভাষা:

  • আঞ্চলিক ভাষা হলো এমন ভাষা যা একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে বা জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রচলিত।
  • এই ভাষা সাধারণত এক বা একাধিক এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকে এবং স্থানীয় মানুষের মধ্যে জনপ্রিয়।
  • বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষা প্রচলিত থাকে, যা সেই এলাকার সাংস্কৃতিক পরিচয় বহন করে।

সার্বজনীন ভাষা:

  • সার্বজনীন ভাষা হলো এমন ভাষা যা বৃহত্তর জনসংখ্যা, কখনো কখনো বিভিন্ন দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • এটি কোন নির্দিষ্ট অঞ্চল বা জনগোষ্ঠীতে সীমাবদ্ধ নয় বরং বিভিন্ন সম্প্রদায় এবং সংস্কৃতির মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  • এই ধরনের ভাষা আন্তর্জাতিক যোগাযোগের জন্যও ব্যবহৃত হয়।

. লিখিত ভাষা:

  • *. লিখিত ভাষা হলো এমন ভাষা যা লেখা আকারে প্রকাশিত হয়।
  • *. এটি সাধারণত নিয়মমাফিক, গঠনগত এবং অনেক সময় প্রমিত হয়।
  • *. লিখিত ভাষায় ভুল বা অস্পষ্টতা এড়ানোর জন্য সাধারণত ব্যাকরণ ও বানান অনুসরণ করা হয়।
  • *. লিখিত ভাষা মূলত লেখাপড়ার কাজ, অফিসিয়াল ডকুমেন্টেশন, সাহিত্য, সংবাদপত্র, বই ও অন্যান্য লিখিত যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যবহৃত হয়।
  • *. লিখিত ভাষা সাধারণত লেখক এবং পাঠকের মধ্যে সরাসরি উপস্থিতির প্রয়োজন হয় না, এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য সংরক্ষণ করা যায়।উদাহরণ:
    • বই, পত্রিকা, ইমেইল, অফিসিয়াল চিঠি ইত্যাদি।

২. চলিত ভাষা:

  • *. চলিত ভাষা হলো এমন ভাষা যা মানুষের দৈনন্দিন কথোপকথনে ব্যবহৃত হয়।
  • *. এটি সাধারণত সহজ, প্রাঞ্জল এবং আনুষ্ঠানিক নিয়মের প্রতি কঠোর না থেকে ব্যবহৃত হয়।
  • *. চলিত ভাষায় প্রায়ই আঞ্চলিক রূপ, সংক্ষিপ্তকরণ এবং সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্য কথ্য রূপ দেখা যায়।
  • *. ব্যক্তিগত আলাপচারিতা, বন্ধু-বান্ধব, পরিবার ও পরিচিতদের সাথে যোগাযোগে এই ভাষা বেশি ব্যবহৃত হয়।

পার্থক্য:

  • রূপ: লিখিত ভাষা মূলত লেখা আকারে, আর চলিত ভাষা মুখে বলা আকারে প্রকাশিত হয়।
  • ব্যাকরণ ও নিয়ম: লিখিত ভাষায় কঠোর ব্যাকরণ অনুসরণ করা হয়, কিন্তু চলিত ভাষায় অনেক সময় এটির শিথিলতা দেখা যায়।
  • ব্যবহার: লিখিত ভাষা আনুষ্ঠানিক, একাডেমিক বা প্রফেশনাল ক্ষেত্রে বেশি ব্যবহৃত হয়, যেখানে চলিত ভাষা দৈনন্দিন জীবনের কথোপকথনে ব্যবহৃত হয়।

লিখিত ভাষা এবং চলিত ভাষা উভয়ই ভাষার গুরুত্বপূর্ণ রূপ, তবে তাদের ব্যবহারিক ক্ষেত্রে এবং গঠনগত রীতি ভিন্ন।

আরও পড়ুন: সমাস কাকে বলে? সমাস কত প্রকার ও কি কি?

প্রয়োগ অথবা ব্যবহারের  দিক দিয়ে ভাষা কত প্রকার?

সেদিন থেকে ভাষাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। 

  • মাতৃভাষা
  • রাষ্ট্রভাষা

ভাষার মূল অংশ:

পৃথিবীর যেকোন ভাষাকে বিশ্লেষণ করা হলে মৌলিক উপাদান হিসেবে মূলত ৪ টি অংশ পাওয়া যায়। এরা হল-

  • ধ্বনি (sound)
  • শব্দ (word)
  • বাক্য (sentence)
  • অর্থ (meaning) 

উপসংহার:

ভাষা মানুষের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ যা সমাজ ও সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক প্রকাশ করে। ভাষার প্রকারভেদ, ব্যবহারের পদ্ধতি এবং তার মৌলিক গঠন সমাজে ভাষার বহুবিধ প্রভাব এবং গুরুত্ব বোঝায়। ভাষার বিভিন্ন রূপ এবং প্রকারের মধ্যে পার্থক্য বোঝার মাধ্যমে আমরা এটি কীভাবে আরো কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারি এবং এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কিভাবে প্রভাবিত করে তা আরো ভালোভাবে বুঝতে পারি।

ভাষার এই বিস্তৃত প্রেক্ষাপট আমাদের ভাষাগত এবং সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধির প্রতি একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top