অব্যয়ীভাব সমাস কাকে বলে? বিভিন্ন অর্থে অব্যয়ীভাব সমাস

আজকে আমরা অব্যয়ীভাব সমাস কাকে বলে? বিভিন্ন অর্থে অব্যয়ীভাব সমাস ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তাহলে আর দেরি না করে চলুন শুরু করি।

অব্যয়ীভাব সমাস কাকে বলে

অব্যয়ীভাব সমাস কি বা কাকে বলে? উদাহরণ দাও

যে সমাসের পূর্বপদে একটি অব্যয় এবং পরপদে একটি বিশেষ্য থাকে এবং অর্থের দিক থেকে পূর্বপদ অর্থাৎ অব্যয়ের অর্থই প্রাধান্য পায়, তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে। অর্থাৎ, পূর্বপদে অব্যয়যোগে নিষ্পন্ন সমাসে যদি অব্যয়ের অর্থই প্রাধান্য থাকে তবে তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে। এ সমাস এ কেবল অব্যয়ের অর্থযোগে ব্যাসবাক্যটি রচিত হয়। যেমন – মরণ পর্যন্ত = আমরণ, দিন দিন = প্রতিদিন ইত্যাদি।

অব্যয়ীভাব সমাসের সংজ্ঞা (ব্যাকরণবিদদের মতে):
অব্যয়ীভাব সমাস হলো এক ধরনের সমাস, যেখানে প্রথম পদটি অব্যয় এবং পরের পদটি কোনো বিশেষ্য বা বিশেষণ। এই দুই পদ মিলে যে নতুন শব্দটি গঠিত হয়, তা সাধারণত অব্যয় অর্থ বহন করে।

বৈশিষ্ট্য:

  1. প্রথম পদটি সবসময় অব্যয় হয়।
  2. সমাসের পর গঠিত শব্দটি নতুন অর্থ প্রকাশ করে।
  3. গঠিত পদটি সাধারণত বিশেষ্য বা বিশেষণ হয় না, এটি অব্যয় রূপে কাজ করে।

উদাহরণ:

  1. যথাসময়ে → যথা (অব্যয়) + সময় (বিশেষ্য)।
  2. অতএব → অত (অব্যয়) + এব।
  3. যথোপযুক্ত → যথা (অব্যয়) + উপযুক্ত।

ব্যাখ্যা:

অব্যয়ীভাব সমাসে প্রথম পদের অব্যয়ত্ব প্রধান ভূমিকা পালন করে এবং তা সমগ্র শব্দের অর্থ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ।

ড. মুহম্মদ এনামুল হকের মতে, “যে সমাসের সমস্যমান পদদ্বয়ের পূর্বপদ অব্যয় হইয়া অর্থের দিক হইতে প্রাধান্য লাভ করে, তাহাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে।”

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, “অব্যয় পদ পূর্বে বসিয়া যে সমাস হয় এবং যাহাতে অব্যয়ের অর্থ প্রধানরূপে বুঝায়, তাহাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে।”

অব্যয়ীভাব সমাসে প্রথম পদটি অব্যয় এবং দ্বিতীয় পদটি প্রধান। উদাহরণ:

  1. অতি ক্ষুদ্র → অতিক্ষুদ্র
  2. অপকর্ম → অপ + কর্ম = অপকর্ম
  3. অতিশয় মিষ্টি → অতিশয়মিষ্টি
  4. সু মধুর → সুমধুর
  5. অধিক জ্ঞান → অধিকজ্ঞান
  6. অতি সুন্দর → অতিসুন্দর
  7. অপসৃষ্ট → অপ + সৃষ্ট = অপসৃষ্ট
  8. অপরিমেয় → অপরিমেয়
  9. অত্যন্ত ভালো → অত্যন্তভালো
  10. অধিকাংশ → অধিক + অংশ = অধিকাংশ

এই ধরনের সমাসে প্রথম পদটি অব্যয় বা অব্যয় ধর্মযুক্ত হয় এবং দ্বিতীয় পদের অর্থই মুখ্য থাকে।

বিভিন্ন অর্থে অব্যয়ীভাব সমাস

সামীপ্য (উপ)কণ্ঠের সমীপে= উপকণ্ঠ, কূলের সমীপে= উপকূল, অক্ষির সমীপে = প্রত্যক্ষ, বনের সমীপে = উপবন
বিপসা (অনু, প্রতি)দিন দিন= প্রতিদিন, ক্ষণে ক্ষণে= অনুক্ষণে, ক্ষণ ক্ষণ= অনুক্ষণ
অভাব অর্থে (নিঃ= নির)আমিষের অভাব= নিরামিষ, ভাবনার অভাব= নির্ভাবনা, জলের অভাব= নির্জল, উৎসাহের অভাব= নিরুৎসাহ, ভাতের অভাব = হাভাত
পর্যন্ত (আ)সমুদ্র থেকে হিমাচল পর্যন্ত= আসমুদ্রহিমাচল, পা থেকে মাথা পর্যন্ত= আপাদমস্তক, মরণ পর্যন্ত = আমরণ
সাদৃশ্য (উপ)শহরের সদৃশ= উপশহর, গ্রহের তুল্য= উপগ্রহ, বনের সদৃশ= উপবন
অনতিক্রম্যতা অর্থে (যথা)রীতিকে অতিক্রম না করে= যথারীতি, সাধ্যকে অতিক্রম না করে= যথাসাধ্য। এরূপ- যথাবিধি, যথাযোগ্য,যথাশাস্ত্র
অতিক্রান্ত (উৎ)বেলাকে অতিক্রান্ত= উদ্বেল, শৃঙখলাকে অতিক্রান্ত= উচ্ছৃঙখল
বিরোধ (প্রতি)বিরুদ্ধ বাদ= প্রতিবাদ, বিরুদ্ধ কূল= প্রতিকূল, বিরুদ্ধ রোধ = প্রতিরোধ
পশ্চাৎ (অনু)পশ্চাৎ গমন= অনুগমন, পশ্চাৎ ধাবন= অনুধাবন
ঈষৎ (আ)ঈষৎ নত= আনত, ঈষৎ রক্তিম= আরক্তিম, ঈষৎ লালচে = লালচে
ক্ষুদ্র অর্থে (উপ)গ্রহের তুল্য = উপগ্রহ, নদীর তুল্য = উপনদী, জেলার ক্ষুদ্র = উপজেলা
পূর্ণ বা সমগ্র অর্থে (পরি বা সম)পরিপূর্ণ, সম্পূর্ণ
দূরবর্তী অর্থে (প্র, পর)অক্ষির অগোচরে= পরোক্ষ। এরূপ- প্রপিতামহ
প্রতিনিধি অর্থে (প্রতি)মূর্তির প্রতিনিধি = প্রতিমূর্তি, এরূপ- প্রতিচ্ছায়া, প্রতিচ্ছবি, প্রতিবিম্ব
প্রতিদ্বন্দ্বী অর্থে (প্রতি)প্রতিপক্ষ, প্রত্যুত্তর ইত্যাদি।
সম্পর্ক অর্থে (সম, বিষয়)সম্বল = বলের সম্পর্কে, সম্মান= মানের সম্পর্কে, সমক্ষে= অক্ষের সম্পর্কে
যোগ্যতা অর্থে (অনু)অনুসন্তান= যোগ্য সন্তান, অনুকূল= কুলের যোগ্য, অনুদান= দানের যোগ্য
কারক – বিভক্তি অর্থেভরদুপুর

অব্যয়ীভাব সমাস নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এমসিকিউ

অব্যয়ীভাব সমাস নিয়ে ৩০টি এমসিকিউ নিচে দেওয়া হলো:

১. ‘নিশ্চল’ শব্দটি কোন ধরনের সমাস?
ক. তৎপুরুষ
খ. অব্যয়ীভাব
গ. দ্বন্দ্ব
ঘ. বহুব্রীহি

২. ‘অতিশয় সুন্দর’ শব্দটি কীভাবে সমাস হবে?
ক. অতিশয়সুন্দর
খ. অতি সুন্দর
গ. সুন্দর অতিশয়
ঘ. অতিসুন্দর

৩. অব্যয়ীভাব সমাসের অর্থ কীভাবে গঠিত হয়?
ক. প্রথম পদ প্রধান
খ. দ্বিতীয় পদ প্রধান
গ. উভয় পদের অর্থ বজায় থাকে
ঘ. পদের অর্থ হারিয়ে যায়

৪. নিচের কোনটি অব্যয়ীভাব সমাস?
ক. উপকূলবর্তী
খ. নীলকমল
গ. অতিশয় ক্ষুদ্র
ঘ. লোকনাথ

৫. ‘অতিবৃহৎ’ শব্দটি কোন সমাসের উদাহরণ?
ক. তৎপুরুষ
খ. বহুব্রীহি
গ. অব্যয়ীভাব
ঘ. দ্বন্দ্ব

৬. অব্যয়ীভাব সমাসে কোন পদ অব্যয় হয়?
ক. প্রথম
খ. দ্বিতীয়
গ. উভয়
ঘ. কোনোটিই নয়

৭. ‘সুদীর্ঘ’ শব্দের সমাস বিচ্ছেদ কী?
ক. সু + দীর্ঘ
খ. সু + দীর্‌ঘ
গ. সুদীর্ঘ + শব্দ
ঘ. দীর্‌ঘ + সু

৮. অব্যয়ীভাব সমাসের প্রধান বৈশিষ্ট্য কী?
ক. অর্থ সংকোচন
খ. উপপদ প্রধান
গ. অব্যয় পদ থাকে
ঘ. পদান্ত প্রধান

৯. ‘অত্যন্ত সুন্দর’ শব্দটি কোনভাবে রূপান্তরিত হবে?
ক. অত্যন্ত সুন্দর
খ. অত্যন্তসুন্দর
গ. অত্যসুন্দর
ঘ. অতিসুন্দর

১০. ‘অতি ক্ষুদ্র’ শব্দটি সমাসের পরে কী হবে?
ক. অতিক্ষুদ্র
খ. ক্ষুদ্র
গ. অতি ক্ষুদ্র
ঘ. ক্ষুদ্রতর

১১. নিচের কোনটি অব্যয়ীভাব সমাস নয়?
ক. অত্যন্ত বড়
খ. অধিকারীজন
গ. সুদক্ষ
ঘ. অপারগ

১২. ‘অপরিমেয়’ শব্দটি কোন সমাসের উদাহরণ?
ক. অব্যয়ীভাব
খ. বহুব্রীহি
গ. তৎপুরুষ
ঘ. দ্বন্দ্ব

১৩. অব্যয়ীভাব সমাসে শব্দ কীভাবে যুক্ত হয়?
ক. দুটি পদ পাশাপাশি থাকে
খ. দুটি পদের মধ্যে অব্যয় যোগ হয়
গ. একটি পদ প্রধান
ঘ. প্রথম পদ অর্থবোধক

১৪. ‘অধিকাংশ’ শব্দটি কোন সমাসের উদাহরণ?
ক. বহুব্রীহি
খ. তৎপুরুষ
গ. অব্যয়ীভাব
ঘ. দ্বন্দ্ব

১৫. ‘সুন্দরভাবে’ শব্দটি কোন সমাসের উদাহরণ?
ক. তৎপুরুষ
খ. বহুব্রীহি
গ. অব্যয়ীভাব
ঘ. দ্বন্দ্ব

১৬. ‘অতিশয় ভালো’ শব্দটি সমাসে কী হবে?
ক. অতিভালো
খ. অতিশয়ভালো
গ. ভালো
ঘ. সুপ্রিয়

১৭. ‘অতি সন্নিকট’ শব্দটি সমাস হলে কী হবে?
ক. অতিসন্নিকট
খ. সন্নিকট
গ. অতি
ঘ. সন্নিকটতম

১৮. ‘সুমধুর’ শব্দটি কীভাবে গঠিত?
ক. সু + মধুর
খ. সুন্দর + মধুর
গ. মধুর + সু
ঘ. সুন্দর মধুর

১৯. অব্যয়ীভাব সমাসে কোনটি সঠিক নয়?
ক. পদের মধ্যে অব্যয় থাকে
খ. অর্থ বর্ধিত হয়
গ. পদের অর্থ সংকুচিত হয়
ঘ. অব্যয় পদটি প্রধান হয়

২০. ‘অধিক ক্ষুদ্র’ শব্দটি সমাসে কীভাবে হবে?
ক. অধিকক্ষুদ্র
খ. ক্ষুদ্রতর
গ. অধিক
ঘ. ক্ষুদ্র

২১. ‘অপসৃষ্ট’ শব্দটির সমাস কীভাবে হবে?
ক. অপ + সৃষ্টি
খ. অপ + সৃষ্ট
গ. সৃষ্টি + অপ
ঘ. অপসৃষ্ট + শব্দ

২২. ‘অতি দ্রুত’ শব্দটি কীভাবে রূপান্তরিত হবে?
ক. অতি দ্রুত
খ. অতিদ্রুত
গ. দ্রুততম
ঘ. তীব্র দ্রুত

২৩. ‘অধিক বুদ্ধিমান’ শব্দটি কীভাবে হবে?
ক. অধিকবুদ্ধিমান
খ. বুদ্ধিমান
গ. অধিক
ঘ. বুদ্ধিতর

২৪. অব্যয়ীভাব সমাসে কোন শব্দ ব্যবহার হয়?
ক. অব্যয় পদ
খ. বিশেষণ
গ. বিশেষ্য
ঘ. সর্বনাম

২৫. ‘অতি প্রকৃষ্ট’ শব্দটি কীভাবে রূপান্তরিত হবে?
ক. অতিপ্রকৃষ্ট
খ. প্রকৃষ্ট
গ. অতি প্রকৃষ্ট
ঘ. প্রকৃষ্টতম

২৬. ‘অপকর্ম’ শব্দটি কোন সমাসের উদাহরণ?
ক. বহুব্রীহি
খ. তৎপুরুষ
গ. অব্যয়ীভাব
ঘ. দ্বন্দ্ব

২৭. ‘অতি প্রাচীন’ শব্দটি কীভাবে হবে?
ক. অতি প্রাচীন
খ. অতিপ্রাচীন
গ. প্রাচীন
ঘ. প্রাচীনতম

২৮. অব্যয়ীভাব সমাসের উদাহরণ কোনটি?
ক. অধিকারী
খ. অতীবিশাল
গ. বহুজন
ঘ. লোকনাথ

২৯. ‘অধিকাংশ’ শব্দটি কীভাবে গঠিত?
ক. অধিক + অংশ
খ. অংশ + অধিক
গ. অধিকাংশ + শব্দ
ঘ. অধিক + জন

৩০. ‘অপমান’ শব্দটি কোন সমাসের উদাহরণ?
ক. তৎপুরুষ
খ. বহুব্রীহি
গ. অব্যয়ীভাব
ঘ. দ্বন্দ্ব

৩১. ‘অতীবিশাল’ শব্দটির সমাসবিচ্ছেদ কী?
ক. অতি + বিশাল
খ. অতি + বিশেষ
গ. অতি + বড়
ঘ. অতি + বিশালকায়

৩২. নিচের কোন শব্দটি অব্যয়ীভাব সমাসের উদাহরণ নয়?
ক. সুদক্ষ
খ. অতিক্ষুদ্র
গ. অপকর্ম
ঘ. নীলকমল

৩৩. ‘অপমান’ শব্দটি কীভাবে গঠিত?
ক. অপ + মান
খ. অপ + মানুষের
গ. অপ + প্রধান
ঘ. অপ + অসম্মান

৩৪. ‘অধিক বুদ্ধিমান’ শব্দটি সমাসে কী হবে?
ক. অধিকবুদ্ধিমান
খ. বুদ্ধিমান
গ. অধিক
ঘ. অধিকজ্ঞ

৩৫. অব্যয়ীভাব সমাসে কোনটি সঠিক?
ক. অর্থ সংকোচন ঘটে
খ. পদের অর্থ বিস্তৃত হয়
গ. প্রথম পদ প্রধান
ঘ. পদের অর্থ পরিবর্তন হয়

উত্তরগুলো আপনারা কমেন্ট করে জানান

তাহলে আজ এখানেই শেষ করছি। আশা করি অব্যয়ীভাব সমাস কি বা কাকে বলে? বিভিন্ন অর্থে অব্যয়ীভাব সমাস সম্পর্কে কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছেন। আমাদের আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লাগলে অবশ্যই পরিবার-পরিজন এবং বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। খুব শীঘ্রই অন্য আরেকটি আর্টিকেল নিয়ে হাজির হব। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top