মাটি কাকে বলে? মাটি কত প্রকার ও কি কি?

আজকের আর্টিকেলে আমরা মাটি কাকে বলে? মাটি কত প্রকার ও কি কি? এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

মাটি কাকে বলে

মাটি কাকে বলে?

মাটি কাকে বলে- মাটি হলো পৃথিবীর উপরের স্তর, যা খনিজ পদার্থ, জৈব পদার্থ, পানি, বায়ু এবং জীবাণু দিয়ে গঠিত। এটি উদ্ভিদের বীজ গজানো, বৃদ্ধির জন্য উপযোগী এবং খাদ্য উৎপাদনের প্রধান মাধ্যম। মাটি পৃথিবীর ভূত্বকের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা উদ্ভিদ, প্রাণী ও মানবজীবনের জন্য অপরিহার্য।

মাটির উপাদানসমূহ:

  1. খনিজ পদার্থ: বালি, পলি, কাঁকর ইত্যাদি যা মাটির স্থায়িত্ব এবং গঠন নির্ধারণ করে।
  2. জৈব পদার্থ: মৃত উদ্ভিদ, প্রাণীর অবশিষ্টাংশ এবং অন্যান্য জৈব পদার্থ মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে।
  3. পানি: মাটির মধ্যে থাকা পানি উদ্ভিদের শিকড়ের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়।
  4. বায়ু: মাটির ছিদ্র বা ফাঁকা স্থানে বাতাস থাকে যা উদ্ভিদের শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য প্রয়োজনীয়।
  5. জীবাণু: বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, কেঁচো প্রভৃতি মাটিতে জৈব পদার্থ ভেঙে মাটির উর্বরতা বাড়ায়।

মাটির গুরুত্ব:

  • উদ্ভিদের বৃদ্ধির মাধ্যম: মাটি উদ্ভিদকে স্থির রাখে এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে।
  • জল সংরক্ষণ: মাটি পানি ধরে রেখে উদ্ভিদের প্রয়োজন অনুযায়ী সরবরাহ করে।
  • প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের অংশ: মাটি প্রাণী, ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য অণুজীবের আবাসস্থল হিসেবে কাজ করে।

মাটির গুণাগুণ :

মাটি কাকে বলে -মাটির গুণাগুণ বা বৈশিষ্ট্য তার গঠন, উর্বরতা, পানি ধারণ ক্ষমতা এবং অন্যান্য উপাদানগুলোর ওপর নির্ভর করে। মাটির গুণাগুণ ঠিকমত বুঝতে পারলে ফসল উৎপাদন এবং কৃষি কার্যক্রম পরিচালনা করা সহজ হয়।

  1. উর্বরতা (Fertility): মাটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণ হলো উর্বরতা। উর্বর মাটিতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান (যেমন নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম) থাকে যা উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয়।
  2. পানি ধারণ ক্ষমতা (Water Retention Capacity): মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা নির্ধারণ করে উদ্ভিদ কতটা পানি শোষণ করতে পারবে। বেলে মাটি কম পানি ধরে রাখে, যেখানে দোআঁশ বা পলি মাটি বেশি পানি ধারণ করে।
  3. বায়ু চলাচল (Air Circulation): মাটির ফাঁকা অংশে বায়ু প্রবাহ থাকে, যা উদ্ভিদের শিকড়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বেলে মাটিতে বায়ু চলাচল বেশি হয়, তবে দোআঁশ মাটি একটি ভালো ভারসাম্য বজায় রাখে।
  4. মাটির পিএইচ মান (Soil pH): মাটির অম্লত্ব বা ক্ষারত্ব নির্ধারণ করে উদ্ভিদ কতটা পুষ্টি শোষণ করতে পারবে। সাধারণত ৬.০ থেকে ৭.৫ এর মধ্যে পিএইচ মানযুক্ত মাটি অধিকাংশ উদ্ভিদের জন্য উপযোগী।
  5. জৈব পদার্থের উপস্থিতি (Organic Matter): মাটিতে থাকা জৈব পদার্থ, যেমন পচা পাতা, জীবজন্তুর অবশেষ, মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে এবং পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ায়।
  6. মাটির গঠন (Soil Texture): মাটির গঠন নির্ভর করে তার কণার আকারের ওপর। বেলে মাটি, পলি মাটি, এবং কাঁকরযুক্ত মাটি ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিয়ে গঠিত হয় এবং ফসল উৎপাদনে ভিন্ন প্রভাব ফেলে।
  7. পুষ্টি উপাদানের উপস্থিতি (Nutrient Content): মাটিতে উপস্থিত নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম এবং অন্যান্য খনিজ উপাদান উদ্ভিদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে।
  8. রঙ (Color): মাটির রঙ তার পুষ্টি উপাদান এবং গঠনের ইঙ্গিত দেয়। কালো বা গাঢ় রঙের মাটি সাধারণত জৈব পদার্থে সমৃদ্ধ এবং উর্বর হয়, যেখানে লাল বা হালকা রঙের মাটি খনিজ পদার্থের উপস্থিতি নির্দেশ করে।
  9. মাটির ঘনত্ব (Soil Density): মাটির কণাগুলোর মধ্যে ফাঁকা জায়গা কেমন তা নির্ধারণ করে। ঘন মাটিতে পানি ও বায়ুর চলাচল কম হয়, যা উদ্ভিদের জন্য ভালো নয়। এ থেকে মাটি কাকে বলে বুঝা যায়।

মাটির প্রকারভেদ :

মাটি প্রধানত চার ধরনের উপাদান নিয়ে গঠিত যথা:

১. খনিজ (৪৫%)

২. জৈব পদার্থ (৫%)

৩. বায়ু (২৫%)

৩. পানি (২৫%)

খনিজ পদার্থ (Mineral Matter):

খনিজ পদার্থ হলো মাটির অনাকর্ষিক অংশ যা শিলার ক্ষয় এবং ভাঙনের ফলে গঠিত হয়। এগুলো মাটির বালুকণা, পলিকণা এবং কাঁকরের আকারে থাকে এবং মাটির কাঠামো নির্ধারণ করে।

খনিজ পদার্থের বৈশিষ্ট্য:

  • উৎস: শিলা এবং খনিজের ভাঙন থেকে আসে।
  • গঠন: বালি, পলি, কাঁকর ইত্যাদি খনিজ উপাদানগুলো মাটির আকার এবং গঠনকে প্রভাবিত করে।
  • প্রভাব: খনিজ পদার্থ মাটির শক্তি, পানি নিষ্কাশন এবং শিকড়ের বৃদ্ধি নির্ধারণ করে।

খনিজ পদার্থের উদাহরণ:

  • বালি (Sand): মাটির বড় আকারের কণাগুলি যা দ্রুত পানি নিষ্কাশনে সাহায্য করে।
  • পলি (Silt): মাঝারি আকারের কণাগুলি যা পানির সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়ায়।
  • কাঁকর (Clay): খুব ছোট কণাগুলি যা পানি দীর্ঘ সময় ধরে রাখতে সক্ষম।

২. জৈব পদার্থ (Organic Matter):

জৈব পদার্থ হলো মাটির জীবিত এবং মৃত জীবজগতের উপাদান, যা জীবজন্তুর অবশেষ এবং উদ্ভিদ, প্রাণীর পচা অংশ থেকে তৈরি হয়। মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি এবং পুষ্টি সরবরাহের জন্য জৈব পদার্থ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

জৈব পদার্থের বৈশিষ্ট্য:

  • উৎস: পচা উদ্ভিদ, প্রাণীজ অবশেষ, এবং অন্যান্য জৈব পদার্থ থেকে গঠিত।
  • গঠন: হিউমাস (Humus) যা পচা জৈব পদার্থ এবং মাটির পুষ্টি ধরে রাখতে সহায়ক।
  • প্রভাব: জৈব পদার্থ মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং উদ্ভিদ বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে।৷

১. বায়ু (Air):

বায়ু হলো গ্যাসের একটি মিশ্রণ, যা পৃথিবীর চারপাশে একটি আবরণ হিসেবে থাকে। এটি বিভিন্ন গ্যাসের সমন্বয়ে গঠিত, যা জীবজগতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বায়ুর গঠন:

  • নাইট্রোজেন (Nitrogen): বায়ুর প্রায় ৭৮% নাইট্রোজেন থাকে, যা উদ্ভিদ ও জীবের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয়।
  • অক্সিজেন (Oxygen): বায়ুর প্রায় ২১% অক্সিজেন থাকে, যা শ্বাস-প্রশ্বাস এবং জীবের শক্তি উৎপাদনের জন্য অপরিহার্য।
  • কার্বন ডাই অক্সাইড (CO₂): প্রায় ০.০৩% কার্বন ডাই অক্সাইড, যা উদ্ভিদের জন্য ফটোসিনথেসিস প্রক্রিয়ার প্রধান উপাদান।
  • অন্যান্য গ্যাস: বায়ুর বাকি অংশে আর্গন, হিলিয়াম, এবং হাইড্রোজেনের মতো ক্ষুদ্র গ্যাস রয়েছে।

বায়ুর গুরুত্ব:

  • শ্বাস-প্রশ্বাস: প্রাণীদের বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন অপরিহার্য, যা বায়ু থেকেই পাওয়া যায়।
  • ফটোসিনথেসিস: উদ্ভিদ বায়ু থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে এবং অক্সিজেন উৎপাদন করে।
  • বায়ুপ্রবাহ ও জলবায়ু: বায়ুপ্রবাহ পৃথিবীর তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, এবং আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
  • দাব ও বায়ুমণ্ডলীয় চাপ: বায়ু পৃথিবীর তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং বিভিন্ন অঞ্চলের জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

২. পানি (Water):

পানি হলো পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদার্থ, যা জীবনের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। এটি H₂O (হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন) দ্বারা গঠিত এবং পৃথিবীর তিন-চতুর্থাংশ অঞ্চল জুড়ে অবস্থান করে।

পানির উৎস:

  • মহাসাগর, নদী ও হ্রদ: পানির প্রধান উৎস হলো মহাসাগর, নদী, হ্রদ এবং জলাশয়।
  • বৃষ্টি ও ভূগর্ভস্থ পানি: বৃষ্টিপাত এবং ভূগর্ভস্থ পানির মাধ্যমে পানি পুনর্ব্যবহার হয় এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়।
  • তুষার ও হিমবাহ: পাহাড়ি অঞ্চলে তুষার ও হিমবাহের গলে পানি সরবরাহ হয়।

পানির গুরুত্ব:

দেহের পুষ্টি সরবরাহ: পানির মাধ্যমে আমাদের শরীরের কোষে পুষ্টি পৌঁছায় এবং বর্জ্য পদার্থ শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।

জীবনধারণ: পানির সাহায্যে প্রাণীরা শ্বাস-প্রশ্বাস ও বিপাকক্রিয়া সম্পন্ন করে, এবং উদ্ভিদ পানি ব্যবহার করে ফটোসিনথেসিস প্রক্রিয়া চালায়।

চাষাবাদ: কৃষিকাজের জন্য পানি অপরিহার্য। ফসল উৎপাদনের জন্য সেচ ব্যবস্থার প্রয়োজন হয়।

পরিবহন ও বিদ্যুৎ উৎপাদন: নদী, সাগর এবং হ্রদ পানি পরিবহন এবং জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়।

মাটি তার গঠন, কণার আকার এবং বিভিন্ন উপাদানের উপস্থিতির ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। মাটির প্রকারভেদ তার কৃষি উৎপাদন, পানি ধারণ ক্ষমতা, এবং উদ্ভিদের বৃদ্ধির ওপর প্রভাব ফেলে। সাধারণত মাটি প্রধানত পাঁচটি ভাগে বিভক্ত।

১. বেলে মাটি (Sandy Soil):

  • গঠন: মাটির কণাগুলো বড় এবং কোarse (মোটা) আকারের হয়।
  • বৈশিষ্ট্য: পানি শোষণ ও দ্রুত নিষ্কাশন হয়, ফলে পানি দীর্ঘ সময় ধরে রাখতে পারে না।
  • ব্যবহার: এই মাটিতে সাধারণত শুষ্ক আবহাওয়ার ফসল (যেমন, তরমুজ, আলু) ভালো জন্মায়।
  • উপযোগিতা: বেলে মাটি বায়ু চলাচলে সুবিধাজনক, কিন্তু পুষ্টি ধরে রাখতে অক্ষম।

২. পলি মাটি (Silty Soil):

  • গঠন: মাটি তুলনামূলকভাবে সূক্ষ্ম এবং মসৃণ কণাযুক্ত হয়।
  • বৈশিষ্ট্য: পানি ধারণ ক্ষমতা ভালো এবং ফসলের জন্য বেশ উর্বর।
  • ব্যবহার: শাকসবজি এবং ফলের চাষে ভালো ফলন দেয়।
  • উপযোগিতা: মাটি সহজে কম্প্যাক্ট হয়, যা শিকড়ের জন্য কখনও কখনও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

৩. কাঁকর মাটি (Clay Soil):

  • গঠন: খুব সূক্ষ্ম কণাযুক্ত এবং ঘন।
  • বৈশিষ্ট্য: পানি শোষণ এবং ধরে রাখার ক্ষমতা অত্যন্ত বেশি, কিন্তু পানি নিষ্কাশন ধীরগতির হয়।
  • ব্যবহার: ধীরে ধীরে পানির নিষ্কাশনের কারণে চাল এবং অন্যান্য জলাভূমির ফসল ভালো জন্মায়।
  • উপযোগিতা: গ্রীষ্মকালে মাটি শক্ত হয়ে যায় এবং চাষের জন্য উপযোগী থাকে না।

৪. দোআঁশ মাটি (Loamy Soil):

  • গঠন: বালি, পলি, এবং কাঁকর মাটির সমানুপাতিক মিশ্রণ।
  • বৈশিষ্ট্য: উর্বর, পানি ধারণ ক্ষমতা ও নিষ্কাশন ক্ষমতা উভয়ই ভালো।
  • ব্যবহার: অধিকাংশ ফসলের চাষের জন্য আদর্শ মাটি।
  • উপযোগিতা: উদ্ভিদের শিকড় সহজে বৃদ্ধির জন্য এটি সবচেয়ে উপযোগী মাটি।

৫. পিট মাটি (Peaty Soil):

  • গঠন: উচ্চমাত্রার জৈব পদার্থ এবং জলাশয়ে জমা হয়ে তৈরি হয়।
  • বৈশিষ্ট্য: খুব বেশি আর্দ্র এবং জৈব পদার্থে সমৃদ্ধ। মাটি খুব উর্বর হয়।
  • ব্যবহার: গাছপালার বাগান এবং শস্যের চাষের জন্য ভালো।
  • উপযোগিতা: মাটির pH নিয়ন্ত্রণ এবং আর্দ্রতা ধরে রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়।

মাটির হ্ময় :

মাটির ক্ষয় (Soil Erosion) হলো প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট কারণে মাটির উর্বর স্তর ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বা বিলীন হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া। মাটির ক্ষয় সাধারণত বায়ু, পানি, এবং মানব কার্যক্রমের মাধ্যমে ঘটে এবং এটি মাটির উর্বরতা কমিয়ে দেয়, ফলে কৃষিকাজের জন্য মাটি অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে।

মাটির ক্ষয়ের কারণসমূহ:

  1. বৃষ্টিপাত ও বন্যা (Rain and Floods): প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে পানি দ্রুত গতিতে মাটির উপরিভাগ থেকে উর্বর স্তর ধুয়ে নিয়ে যায়, বিশেষ করে যেখানে কোন গাছপালা বা শিকড় নেই।
  2. বায়ুপ্রবাহ (Wind Erosion): শুষ্ক এবং বেলে মাটিতে বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমে মাটির ক্ষয় ঘটে, বিশেষ করে যেখানে উদ্ভিদহীন শুষ্ক এলাকা থাকে।
  3. মানবসৃষ্ট কারণ (Human Activities):
    • বন নিধন (Deforestation): গাছ কেটে ফেলা হলে মাটির উপরের স্তর রক্ষা করার জন্য কোন শিকড় বা গাছপালা থাকে না, ফলে বৃষ্টির পানি মাটি ধুয়ে নিয়ে যায়।
    • অতিরিক্ত চাষাবাদ (Over-cultivation): একই জমিতে বারবার চাষাবাদ করলে মাটির পুষ্টি কমে যায় এবং মাটি দুর্বল হয়ে পড়ে।
    • অপরিকল্পিত নগরায়ন (Unplanned Urbanization): কৃষি জমি এবং বনভূমি কেটে নগর গড়ে তোলার ফলে মাটির উর্বরতা কমে যায়।
  4. অতিরিক্ত পশুচারণ (Overgrazing): অতিরিক্ত গবাদিপশু চরানোর ফলে মাটির উপরের সবুজ স্তর এবং শিকড় নষ্ট হয়, ফলে মাটি ক্ষয়ের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

মাটির ক্ষয়ের প্রকারভেদ:

  1. পানির ক্ষয় (Water Erosion): এটি সবচেয়ে সাধারণ মাটির ক্ষয় প্রক্রিয়া, যেখানে বৃষ্টির পানি বা নদীর স্রোত মাটির উপরিভাগ ধুয়ে নিয়ে যায়।
    • শীট ক্ষয় (Sheet Erosion): বৃষ্টির সময় মাটির সমতল অংশের উপরের স্তর ধুয়ে যায়।
    • গালিচা ক্ষয় (Rill Erosion): ছোট ছোট নালা বা চ্যানেলের মাধ্যমে মাটির স্তর ক্ষয়ে পড়ে।
    • গালিয়াল ক্ষয় (Gully Erosion): দীর্ঘ সময়ের বৃষ্টিপাতের কারণে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়, যা জমির অনেক অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
  2. বায়ু ক্ষয় (Wind Erosion): শুষ্ক এলাকায় বাতাসের মাধ্যমে মাটির উপরের স্তর সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, যা মরুভূমি অঞ্চলে বেশি দেখা যায়।

মাটির ক্ষয়ের প্রভাব:

  1. কৃষি উৎপাদন কমে যায়: মাটির উর্বর স্তর ধ্বংস হলে, কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি কমে যায় এবং উদ্ভিদ ও ফসল উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়।
  2. জলবায়ুর পরিবর্তন: মাটির ক্ষয় হলে মাটির শীতলতা ও আর্দ্রতা হারিয়ে যায়, যা স্থানীয় জলবায়ুতে পরিবর্তন ঘটায়।
  3. প্রাকৃতিক দুর্যোগের বৃদ্ধি: মাটির ক্ষয় হলে ভূমিধস, বন্যা এবং মরুকরণের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
  4. জলাশয় ও নদীর দূষণ: মাটির ক্ষয়ের ফলে মাটির কণা নদী ও জলাশয়ে মিশে দূষণ সৃষ্টি করে।

মাটির ক্ষয় রোধে করণীয়:

  1. বনায়ন (Afforestation): বেশি বেশি গাছ লাগিয়ে মাটির উপরের স্তরকে রক্ষা করা যায়।
  2. সেচের সঠিক ব্যবহার: অযথা পানি অপচয় রোধ করে এবং পরিকল্পিত সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে মাটির ক্ষয় কমানো যায়।
  3. ফসলের ঘূর্ণায়মান চাষাবাদ (Crop Rotation): একই জমিতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ফসল চাষ করা হলে মাটির পুষ্টি ধরে রাখা যায়।
  4. কাঁচা জমি ঢেকে রাখা (Cover Cropping): মাটির উপরের স্তরে সবুজ ফসল বা গাছ লাগিয়ে রাখা গেলে মাটির ক্ষয় রোধ হয়।

উপসংহার :

মাটি আমাদের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ, যা খাদ্য উৎপাদন, জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মাটির প্রকারভেদ, গুণাবলি এবং সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারি। তবে, মাটির ক্ষয়, দূষণ এবং অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের কারণে মাটির উর্বরতা ও গুণাগুণ নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে। সঠিকভাবে মাটি সংরক্ষণ এবং টেকসই কৃষি পদ্ধতি ব্যবহার করা হলে এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ হিসেবে টিকে থাকবে। মাটি রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব।তাতে করে মাটি কাকে বলে বুঝা যায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top