আজকের আর্টিকেলে আমরা মৌলিক ও যৌগিক পদার্থ কাকে বলে? মৌলিক ও যৌগিক পদার্থ কত প্রকার? এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

মৌলিক পদার্থ কাকে বলে?
মৌলিক পদার্থ হলো এমন পদার্থ, যা এককভাবে বিদ্যমান এবং যাকে রাসায়নিকভাবে ভেঙে সহজতর পদার্থে পরিণত করা যায় না। এটি এক বা একাধিক সমজাতীয় পরমাণু দ্বারা গঠিত হয় এবং এর গঠন অপরিবর্তিত থাকে। মৌলিক পদার্থের প্রতিটি পরমাণু একই ধরনের প্রোটন সংখ্যা ধারণ করে।
যৌগিক পদার্থ কাকে বলে?
যৌগিক পদার্থ হলো এমন একটি রাসায়নিক পদার্থ যা দুই বা ততোধিক মৌলিক পদার্থের রাসায়নিক সংযোজনে তৈরি হয়। যৌগিক পদার্থের উপাদানগুলো একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে যুক্ত থাকে এবং তারা একটি নতুন পদার্থের বৈশিষ্ট্য ধারণ করে, যা তাদের গঠনকারী মৌলিক পদার্থের বৈশিষ্ট্য থেকে ভিন্ন।
মৌলিক পদার্থের ইতিহাস :
মৌলিক পদার্থের ইতিহাস মানব সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। প্রাচীনকালে মানুষ বিভিন্ন পদার্থের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছে, যা ধীরে ধীরে মৌলিক পদার্থ সম্পর্কে তাদের ধারণা গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞানীরা মৌলিক পদার্থের ধারণাকে পরিমার্জিত ও সংগঠিত করেছেন।
প্রাচীন যুগ:
- প্রাক-দার্শনিক ধারণা: প্রাচীন সভ্যতায় মানুষ বিশ্বাস করত যে পৃথিবী, পানি, বায়ু এবং আগুন এই চারটি উপাদান থেকেই সবকিছু গঠিত। গ্রিক দার্শনিক এম্পেডোক্লিস (৪৯০-৪৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) এই চারটি উপাদানকে পৃথিবীর মূল উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করেন। পরবর্তী সময়ে, গ্রীক দার্শনিক অ্যারিস্টটল এই ধারণাকে আরও জনপ্রিয় করে তোলেন।
- আলকেমি: প্রাচীনকালের অনেক আলকেমিস্ট বিশ্বাস করতেন যে মৌলিক পদার্থগুলোর মাধ্যমে সাধারণ ধাতু থেকে সোনা তৈরি করা সম্ভব। যদিও এই ধারণা ভুল ছিল, আলকেমির কাজ রাসায়নিক বিক্রিয়ার প্রাথমিক ধারণা এবং পরবর্তীতে রসায়নবিদ্যায় পরিণত হতে সাহায্য করে।
মধ্যযুগ:
মধ্যযুগে বিজ্ঞানী ও আলকেমিস্টরা বিভিন্ন পদার্থ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে থাকেন। তারা বিশ্বাস করতেন যে সমস্ত পদার্থ মূলত কিছু মৌলিক উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। তবে, মৌলিক পদার্থের সঠিক ধারণা তখনো স্পষ্ট হয়নি।
আধুনিক যুগ:
- রবার্ট বয়েল (Robert Boyle): ১৬৬১ সালে ইংরেজ বিজ্ঞানী রবার্ট বয়েল তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “The Sceptical Chymist”-এ প্রথমবারের মতো প্রস্তাব করেন যে কোনো পদার্থকে মৌলিক বলা যেতে পারে যদি সেটি অন্য কোনো পদার্থে বিভাজিত না হয়। তিনি চার মৌলিক উপাদান তত্ত্বকে চ্যালেঞ্জ করেন এবং প্রমাণ করেন যে অনেক পদার্থ মৌলিক নয়।
- অ্যান্টনি ল্যাভয়জিয়ার (Antoine Lavoisier): ফরাসি বিজ্ঞানী অ্যান্টনি ল্যাভয়জিয়ারকে আধুনিক রসায়নের জনক বলা হয়। ১৭৮৯ সালে তাঁর রচিত “Elementary Treatise of Chemistry” গ্রন্থে প্রথমবারের মতো মৌলিক পদার্থের তালিকা প্রদান করা হয়। তিনি অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, এবং অন্যান্য মৌলিক পদার্থ আবিষ্কার করেন এবং দেখান যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় কোনো পদার্থ নষ্ট হয় না, বরং এটি রূপান্তরিত হয়।
- ডাল্টনের পারমাণবিক তত্ত্ব (John Dalton’s Atomic Theory): ১৮০৩ সালে জন ডাল্টন তাঁর পারমাণবিক তত্ত্বের মাধ্যমে প্রমাণ করেন যে সব পদার্থ পরমাণু দিয়ে গঠিত এবং প্রতিটি মৌলিক পদার্থের পরমাণু একক ও অভিন্ন হয়। তাঁর তত্ত্বে দেখানো হয় যে মৌলিক পদার্থ ভিন্ন ভিন্ন ধরনের পরমাণু নিয়ে গঠিত।
- মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণি (Dmitri Mendeleev’s Periodic Table): ১৮৬৯ সালে রাশিয়ান বিজ্ঞানী দিমিত্রি মেন্ডেলিফ প্রথমবারের মতো মৌলিক পদার্থগুলোকে তাদের ভর ও বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে সাজিয়ে একটি পর্যায় সারণি তৈরি করেন। এটি মৌলিক পদার্থের সঠিক শ্রেণিবিন্যাস এবং নতুন মৌলিক পদার্থের আবিষ্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আরও পড়ুন: রসায়ন কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?
আধুনিক বিজ্ঞান ও মৌলিক পদার্থ:
আজকের দিনে, মোট ১১৮টি মৌলিক পদার্থ সনাক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে ৯৪টি প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায় এবং বাকিগুলো কৃত্রিম উপায়ে পারমাণবিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। মৌলিক পদার্থের ধারণা উন্নত হওয়ার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা পরমাণুর গঠন, উপাদানগুলোর বৈশিষ্ট্য, এবং তাদের প্রয়োগ সম্পর্কে আরও গভীর জ্ঞান অর্জন করেছেন।
মৌলিক পদার্থের ইতিহাস :
মৌলিক পদার্থের ইতিহাস মানব সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। প্রাচীনকালে মানুষ বিভিন্ন পদার্থের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছে, যা ধীরে ধীরে মৌলিক পদার্থ সম্পর্কে তাদের ধারণা গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞানীরা মৌলিক পদার্থের ধারণাকে পরিমার্জিত ও সংগঠিত করেছেন।
প্রাচীন যুগ:
- প্রাক-দার্শনিক ধারণা: প্রাচীন সভ্যতায় মানুষ বিশ্বাস করত যে পৃথিবী, পানি, বায়ু এবং আগুন এই চারটি উপাদান থেকেই সবকিছু গঠিত। গ্রিক দার্শনিক এম্পেডোক্লিস (৪৯০-৪৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) এই চারটি উপাদানকে পৃথিবীর মূল উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করেন। পরবর্তী সময়ে, গ্রীক দার্শনিক অ্যারিস্টটল এই ধারণাকে আরও জনপ্রিয় করে তোলেন।
- আলকেমি: প্রাচীনকালের অনেক আলকেমিস্ট বিশ্বাস করতেন যে মৌলিক পদার্থগুলোর মাধ্যমে সাধারণ ধাতু থেকে সোনা তৈরি করা সম্ভব। যদিও এই ধারণা ভুল ছিল, আলকেমির কাজ রাসায়নিক বিক্রিয়ার প্রাথমিক ধারণা এবং পরবর্তীতে রসায়নবিদ্যায় পরিণত হতে সাহায্য করে।
মধ্যযুগ:
মধ্যযুগে বিজ্ঞানী ও আলকেমিস্টরা বিভিন্ন পদার্থ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে থাকেন। তারা বিশ্বাস করতেন যে সমস্ত পদার্থ মূলত কিছু মৌলিক উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। তবে, মৌলিক পদার্থের সঠিক ধারণা তখনো স্পষ্ট হয়নি।
আধুনিক যুগ:
- রবার্ট বয়েল (Robert Boyle): ১৬৬১ সালে ইংরেজ বিজ্ঞানী রবার্ট বয়েল তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “The Sceptical Chymist”-এ প্রথমবারের মতো প্রস্তাব করেন যে কোনো পদার্থকে মৌলিক বলা যেতে পারে যদি সেটি অন্য কোনো পদার্থে বিভাজিত না হয়। তিনি চার মৌলিক উপাদান তত্ত্বকে চ্যালেঞ্জ করেন এবং প্রমাণ করেন যে অনেক পদার্থ মৌলিক নয়।
- অ্যান্টনি ল্যাভয়জিয়ার (Antoine Lavoisier): ফরাসি বিজ্ঞানী অ্যান্টনি ল্যাভয়জিয়ারকে আধুনিক রসায়নের জনক বলা হয়। ১৭৮৯ সালে তাঁর রচিত “Elementary Treatise of Chemistry” গ্রন্থে প্রথমবারের মতো মৌলিক পদার্থের তালিকা প্রদান করা হয়। তিনি অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, এবং অন্যান্য মৌলিক পদার্থ আবিষ্কার করেন এবং দেখান যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় কোনো পদার্থ নষ্ট হয় না, বরং এটি রূপান্তরিত হয়।
- ডাল্টনের পারমাণবিক তত্ত্ব (John Dalton’s Atomic Theory): ১৮০৩ সালে জন ডাল্টন তাঁর পারমাণবিক তত্ত্বের মাধ্যমে প্রমাণ করেন যে সব পদার্থ পরমাণু দিয়ে গঠিত এবং প্রতিটি মৌলিক পদার্থের পরমাণু একক ও অভিন্ন হয়। তাঁর তত্ত্বে দেখানো হয় যে মৌলিক পদার্থ ভিন্ন ভিন্ন ধরনের পরমাণু নিয়ে গঠিত।
- মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণি (Dmitri Mendeleev’s Periodic Table): ১৮৬৯ সালে রাশিয়ান বিজ্ঞানী দিমিত্রি মেন্ডেলিফ প্রথমবারের মতো মৌলিক পদার্থগুলোকে তাদের ভর ও বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে সাজিয়ে একটি পর্যায় সারণি তৈরি করেন। এটি মৌলিক পদার্থের সঠিক শ্রেণিবিন্যাস এবং নতুন মৌলিক পদার্থের আবিষ্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আধুনিক বিজ্ঞান ও মৌলিক পদার্থ:
আজকের দিনে, মোট ১১৮টি মৌলিক পদার্থ সনাক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে ৯৪টি প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায় এবং বাকিগুলো কৃত্রিম উপায়ে পারমাণবিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। মৌলিক পদার্থের ধারণা উন্নত হওয়ার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা পরমাণুর গঠন, উপাদানগুলোর বৈশিষ্ট্য, এবং তাদের প্রয়োগ সম্পর্কে আরও গভীর জ্ঞান অর্জন করেছেন।
যৌগিক পদার্থের ইতিহাস :
যৌগিক পদার্থের ইতিহাস মানব সভ্যতার প্রাথমিক পর্যায় থেকেই রাসায়নিক পদার্থের সন্ধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। মানুষের মৌলিক পদার্থ ও তাদের সংমিশ্রণ সম্পর্কে ধারণা ক্রমশ পরিবর্তিত ও পরিপক্ব হয়েছে। যৌগিক পদার্থ সম্পর্কে আমাদের যে জ্ঞান আজ বিদ্যমান, তা শতাব্দী ধরে চালানো গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফল।
প্রাচীন যুগ:
- আলকেমি ও প্রাচীন বিশ্বাস: প্রাচীনকালে মানুষের ধারণা ছিল যে কিছু মৌলিক উপাদানের মিশ্রণে নতুন পদার্থ তৈরি করা যায়। আলকেমির সময়ে, বিশেষ করে গ্রিস, মিশর, চীন, এবং ভারতবর্ষে বিশ্বাস করা হতো যে সোনা তৈরি করা সম্ভব, এবং সেই চেষ্টায় তারা বিভিন্ন পদার্থের সংমিশ্রণ নিয়ে পরীক্ষা চালাতেন। যদিও তাদের প্রক্রিয়াগুলো আধুনিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ভুল ছিল, তবুও এটি যৌগিক পদার্থ তৈরির ধারণাকে বিকশিত করতে ভূমিকা রাখে।
মধ্যযুগ:
- আরব আলকেমিস্টদের অবদান: মধ্যযুগে আরব বিজ্ঞানীরা রসায়ন শাস্ত্রে অনেক অবদান রাখেন। জাবির ইবনে হাইয়ান (৭২২-৮০৩ খ্রিস্টাব্দ) তার সময়ের একজন বিখ্যাত আলকেমিস্ট ছিলেন, যিনি যৌগিক পদার্থের ধারণা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি বিভিন্ন ধাতু এবং খনিজ পদার্থের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া পরীক্ষা করেন এবং তাদের সংমিশ্রণে নতুন পদার্থ তৈরির পদ্ধতি নির্ধারণ করেন।
আধুনিক যুগ:
- রবার্ট বয়েল (Robert Boyle): ১৬৬১ সালে রবার্ট বয়েল তাঁর বিখ্যাত বই “The Sceptical Chymist”-এ যৌগিক পদার্থ সম্পর্কে আধুনিক ধারণা প্রকাশ করেন। তিনি দেখান যে যৌগগুলো মৌলিক পদার্থের সংমিশ্রণে গঠিত এবং এগুলো রাসায়নিক পদ্ধতিতে ভেঙে ফেলা সম্ভব। তিনি ব্যাখ্যা করেন যে যৌগিক পদার্থে অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি উপাদান তার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হারিয়ে নতুন বৈশিষ্ট্য ধারণ করে।
- জন ডাল্টনের পারমাণবিক তত্ত্ব (John Dalton’s Atomic Theory): ১৮০৩ সালে জন ডাল্টন তাঁর পারমাণবিক তত্ত্বে বলেন যে প্রত্যেক মৌলিক পদার্থের নিজস্ব পরমাণু রয়েছে এবং পরমাণুর ভিন্ন ভিন্ন গঠন একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যৌগিক পদার্থ তৈরি করে। এই তত্ত্বের মাধ্যমে যৌগের গঠন নিয়ে বিজ্ঞানীদের ধারণা আরও পরিষ্কার হয়।
- অ্যান্টনি ল্যাভয়জিয়ার (Antoine Lavoisier): ফরাসি বিজ্ঞানী অ্যান্টনি ল্যাভয়জিয়ার, যাকে আধুনিক রসায়নের জনক বলা হয়, যৌগিক পদার্থের গঠন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ১৭৮৯ সালে তিনি প্রমাণ করেন যে রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময় যৌগ গঠনকারী উপাদানগুলো একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে সংযুক্ত হয়। তিনি অক্সিজেন এবং অন্যান্য গ্যাসের যৌগিক পদার্থের গঠন নিয়ে গবেষণা করেন এবং বাতাস, পানি ইত্যাদি যৌগ সম্পর্কে নতুন তথ্য প্রদান করেন।
- দিমিত্রি মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণি (Dmitri Mendeleev’s Periodic Table): ১৮৬৯ সালে রাশিয়ান বিজ্ঞানী দিমিত্রি মেন্ডেলিফ মৌলিক পদার্থগুলিকে একটি পর্যায় সারণির মধ্যে সাজান, যা পরবর্তীতে যৌগিক পদার্থের বৈশিষ্ট্য ও গঠন বুঝতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাঁর সারণির ভিত্তিতে জানা যায় যে বিভিন্ন মৌলিক পদার্থের পরমাণুগুলোর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী তারা একে অপরের সঙ্গে যৌগ তৈরি করতে পারে।
মৌলিক ও যৌগিক পদার্থের প্রকারভেদ :
মৌলিক পদার্থগুলো তাদের গঠন অনুযায়ী দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়:
- ধাতু (Metals):
- উচ্চ তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহী।
- উজ্জ্বল ও চকচকে।
- নমনীয় (মোড়ানো যায়) এবং প্রসারণশীল (লম্বা করে টানা যায়)।
- যেমন: সোনা (Au), রূপা (Ag), লোহা (Fe), তামা (Cu)।
- অধাতু (Non-metals):
- তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহিতা কম।
- সাধারণত চকচকে হয় না (নির্জীব বা ম্যাট ফিনিশ)।
- ভঙ্গুর এবং কঠিন বা তরল হতে পারে।
- যেমন: অক্সিজেন (O₂), নাইট্রোজেন (N₂), সালফার (S)।
- উপধাতু (Metalloids):
- ধাতু ও অধাতু উভয়ের বৈশিষ্ট্য ধারণ করে।
- কিছুটা তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহিতা আছে, কিন্তু ধাতুর মতো কার্যকর নয়।
- যেমন: সিলিকন (Si), বোরন (B), জার্মেনিয়াম (Ge)।
যৌগিক পদার্থের প্রকারভেদ:
যৌগিক পদার্থকে রাসায়নিক বন্ধনের ধরন অনুযায়ী দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়:
- আয়নিক যৌগ (Ionic Compounds):
- এই যৌগগুলো ধাতু এবং অধাতু উপাদান থেকে গঠিত হয়।
- ধাতু পরমাণু ইলেকট্রন দেয়, এবং অধাতু পরমাণু সেই ইলেকট্রন গ্রহণ করে, যার ফলে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আয়ন তৈরি হয়।
- শক্তিশালী ইলেকট্রোস্ট্যাটিক বলের মাধ্যমে আয়নিক যৌগ গঠিত হয়।
- যেমন: সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl), ক্যালসিয়াম কার্বনেট (CaCO₃)।
- কোভালেন্ট যৌগ (Covalent Compounds):
- দুটি বা ততোধিক অধাতু পরমাণু পরস্পরের সঙ্গে ইলেকট্রন ভাগ করে গঠন করে।
- এই যৌগগুলোতে ইলেকট্রন ভাগাভাগি করে কোভালেন্ট বন্ধন তৈরি হয়।
- যেমন: পানি (H₂O), কার্বন ডাই অক্সাইড (CO₂), মিথেন (CH₄)।
- জৈব যৌগ (Organic Compounds):
- এই যৌগগুলোতে প্রধানত কার্বন পরমাণুর উপস্থিতি থাকে।
- জৈব যৌগগুলো প্রধানত জীবিত প্রাণীর শরীর ও বায়োলোজিকাল সিস্টেমের অংশ।
- যেমন: গ্লুকোজ (C₆H₁₂O₆), প্রোটিন, লিপিড।
- অজৈব যৌগ (Inorganic Compounds):
- এই যৌগগুলোতে কার্বন পরমাণু উপস্থিত নাও থাকতে পারে।
- জীবিত প্রাণী বা বায়োলোজিকাল সিস্টেমের বাইরের পদার্থ।
- যেমন: সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl), সিলিকা (SiO₂)।
মৌলিক ও যৌগিক পদার্থের ব্যাবহার
মৌলিক পদার্থ এবং যৌগিক পদার্থ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মৌলিক পদার্থ যেমন অক্সিজেন (O₂) শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য প্রয়োজনীয়, হাইড্রোজেন জ্বালানী হিসেবে ব্যবহৃত হয়, এবং লোহা (Fe) থেকে তৈরি হয় বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ও অবকাঠামো। সোনা (Au) ও রূপা (Ag) অলংকার ও বৈদ্যুতিক সার্কিট তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে, যৌগিক পদার্থ যেমন পানি (H₂O) আমাদের জীবনের অপরিহার্য উপাদান, সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) রান্নায় লবণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, এবং কার্বন ডাই অক্সাইড (CO₂) উদ্ভিদের জন্য ফটোসিনথেসিস প্রক্রিয়ায় জরুরি। এছাড়াও, ক্যালসিয়াম কার্বনেট (CaCO₃) সিমেন্ট তৈরিতে এবং অ্যামোনিয়া (NH₃) সার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এইসব পদার্থ আমাদের শিল্প, চিকিৎসা, কৃষি এবং পরিবেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অপরিহার্য।
সারসংক্ষেপ
মৌলিক ও যৌগিক পদার্থ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ। মৌলিক পদার্থ যেমন অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, এবং লোহা প্রাকৃতিক ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে, যৌগিক পদার্থ যেমন পানি, সোডিয়াম ক্লোরাইড, এবং কার্বন ডাই অক্সাইড জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়। এদের ব্যবহার কৃষি, শিল্প, চিকিৎসা, এবং পরিবেশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।