বন্যা কাকে বলে? বন্যার প্রকারভেদ এবং বিভক্তিকরণ।

আজকের আর্টিকেলে আমরা বন্যা কাকে বলে? বন্যার প্রকারভেদ এবং বিভক্তিকরণ এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

বন্যা

বন্যা কাকে বলে?

বন্যা কাকে বলে- বন্যা হলো একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেখানে প্রচুর পরিমাণে পানি কোনো নির্দিষ্ট স্থানের স্বাভাবিক সীমা অতিক্রম করে নিচু এলাকা প্লাবিত করে। সাধারণত অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত, নদীর পানি উপচে পড়া, সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি, কিংবা বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণে বন্যা ঘটে।

বন্যার ইতিহাস

বন্যার ইতিহাস মানব সভ্যতার প্রাচীনকাল থেকেই বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এবং বিপর্যয়ের সাথে যুক্ত। বিভিন্ন সভ্যতার বিকাশ ও ধ্বংসের পেছনেও বন্যার ভূমিকা রয়েছে। প্রাচীনকালে নদীর ধারে গড়ে ওঠা অনেক সভ্যতাই বন্যার কারণে ধ্বংস হয়েছে, আবার অনেক ক্ষেত্রেই তা উর্বর ভূমি তৈরির মাধ্যমে কৃষি উৎপাদনে সহায়ক হয়েছে।

বন্যা কাকে বলে -নিচে বন্যার ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা ও তথ্য তুলে ধরা হলো:

১. প্রাচীন মেসোপটেমিয়া ও নূহ (আ.)-এর বন্যা

মেসোপটেমিয়া সভ্যতার কেন্দ্রস্থল ছিল টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর তীরে। এখানে নিয়মিত বন্যা হতো, যা মাটিকে উর্বর করত এবং কৃষির জন্য উপযোগী করে তুলত। তবে এই অঞ্চলে একটি বিখ্যাত বন্যা হলো নূহ (আ.)-এর মহাপ্লাবন, যা কুরআন, বাইবেল এবং তাওরাতে উল্লেখিত হয়েছে। নূহ (আ.)-এর সময়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বিশাল বন্যা দ্বারা পুরো পৃথিবী প্লাবিত হয়েছিল এবং এটি ধর্মীয় ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

২. নীল নদের বন্যা (মিশর)

প্রাচীন মিশরের সভ্যতা নীল নদীর উপর নির্ভরশীল ছিল। নীল নদ প্রতি বছর প্লাবিত হতো, যা কৃষির জন্য উর্বর মাটি সরবরাহ করত। তবে নিয়ন্ত্রণহীন বন্যা কখনো কখনো মিশরের বিভিন্ন এলাকায় বিপর্যয় সৃষ্টি করত। নীল নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণে আনতে মিশরীয়রা বাঁধ ও সেচ ব্যবস্থা তৈরি করে। নীল নদের নিয়মিত বন্যাই মিশরীয় সভ্যতার সমৃদ্ধির একটি মূল কারণ ছিল।

৩. চীনের ইয়েলো নদীর বন্যা

চীনের ইয়েলো নদী (হুয়াং হে) তার বারবার বন্যা ও ভয়াবহতা জন্য পরিচিত। ইতিহাসে এই নদীর বন্যাকে “চীনের দুঃখ” বলা হয়, কারণ ইয়েলো নদীর বন্যা লাখো মানুষের মৃত্যু এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়েছে। চীনের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্যভাবে ১৯৩১ সালের ইয়েলো নদীর বন্যা ছিল সবচেয়ে মারাত্মক, যেখানে কয়েক মিলিয়ন মানুষ মারা যায়।

৪. ১৯৭০ সালের ভোলার ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা (বাংলাদেশ)

১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর বাংলাদেশের ভোলা জেলায় ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা একসাথে আঘাত হানে, যা পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় হিসেবে গণ্য করা হয়। এতে প্রায় ৩-৫ লাখ মানুষ মারা যায়। এটি বাংলাদেশ তথা পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা আন্দোলনের একটি প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিল, কারণ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতা ও উপেক্ষার কারণে স্থানীয়দের ক্ষোভ আরও বেড়ে যায়।

৫. ১৯৯৮ সালের বন্যা (বাংলাদেশ)

বাংলাদেশে ১৯৯৮ সালের বন্যা ছিল ইতিহাসের দীর্ঘতম এবং সবচেয়ে বিধ্বংসী বন্যাগুলির মধ্যে একটি। দেশের প্রায় ৬৮% এলাকা প্লাবিত হয়েছিল, এবং এতে প্রায় ৩০ মিলিয়ন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এই বন্যায় দেশের অর্থনীতি, অবকাঠামো এবং কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়।

৬. ২০১۰ সালের পাকিস্তানের বন্যা

২০১০ সালে পাকিস্তানে বন্যা আঘাত হানে, যা ১৯২৯ সালের পর সবচেয়ে ভয়াবহ হিসেবে বিবেচিত হয়। এতে প্রায় ২০ মিলিয়ন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং দেশের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ প্লাবিত হয়েছিল। এই বন্যায় ১,৭০০ জনেরও বেশি লোক মারা যায় এবং লক্ষাধিক ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়।

৭. যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি নদীর বন্যা (১৯২৭)

মিসিসিপি নদীর বন্যা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এবং ভয়াবহ বন্যা। এই বন্যা প্রায় ২৭,০০০ বর্গমাইল এলাকা প্লাবিত করে এবং লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। এতে কৃষি, শিল্প এবং অবকাঠামোতে ব্যাপক ক্ষতি হয়।

বন্যার প্রকারভেদ :

বন্যা সাধারণত বিভিন্ন কারণে ঘটে এবং তার প্রভাব ও উৎসের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন প্রকারে ভাগ করা যায়। নিচে বন্যার প্রধান প্রকারভেদগুলো উল্লেখ করা হলো:

১. বৃষ্টিজনিত বন্যা (Rain-fed Flood):

বৃষ্টির অতিরিক্ত পরিমাণ যখন নদী, খাল বা জলাশয়ে ধারণ ক্ষমতার বেশি পানি জমে যায়, তখন এই ধরনের বন্যা ঘটে। ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে নদী বা হ্রদ উপচে পানি আশেপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।

২. নদীভাঙনজনিত বন্যা (River Flood):

নদীর পানির স্তর বাড়তে বাড়তে নদীর বাঁধ বা প্রাকৃতিক উপকূল ভেঙে গেলে এই ধরনের বন্যা হয়। নদীর তীরে থাকা নিম্নাঞ্চলগুলোতে এটি বেশি ঘটে।

৩. জোয়ারভাটাজনিত বন্যা (Tidal Flood):

সাগরের পানি যখন অস্বাভাবিকভাবে উঁচু হয়ে ওঠে, যেমন ঘূর্ণিঝড় বা পূর্ণিমার জোয়ারের সময়, তখন উপকূলীয় এলাকায় এই ধরনের বন্যা ঘটে।

৪. ফ্ল্যাশ বন্যা (Flash Flood):

হঠাৎ করে অল্প সময়ের মধ্যে বৃষ্টির কারণে দ্রুত পানি জমে যাওয়ার কারণে ঘটে। পাহাড়ি এলাকায় বা খাড়া জমিতে এ ধরনের বন্যা বেশি দেখা যায়।

৫. নদী বা হ্রদের বাঁধ ভেঙে যাওয়ার বন্যা (Dam Break Flood):

কোনো বড় বাঁধ বা ব্যারেজ ভেঙে গেলে প্রচুর পরিমাণে পানি একসঙ্গে নিচের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে এবং তাতে বন্যা হয়।

৬. বন-জলাধার বন্যা (Urban Flooding):

শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে, বেশি বৃষ্টির সময় পানি ঠিকমতো বের হতে না পারলে শহরের রাস্তা ও নিচু এলাকায় বন্যার সৃষ্টি হয়।

৭. তুষার গলনজনিত বন্যা (Snowmelt Flood):

পাহাড় বা পর্বতমালার তুষার গলে যাওয়ার সময় নদীর পানির স্তর বেড়ে যায় এবং তাতে বন্যা হয়।

৮. বজ্রঝড়জনিত বন্যা (Thunderstorm Flood):

বজ্রঝড়ের সাথে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হলে তাৎক্ষণিকভাবে বন্যার সৃষ্টি হয়, বিশেষ করে খোলা এলাকায় বা উপত্যকা অঞ্চলে।

এই বিভিন্ন ধরনের বন্যা প্রাকৃতিক কারণে ঘটে এবং মানুষের জীবনযাত্রা ও অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।

বাংলাদেশের বন্যার পরিস্থিতি

বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, জলবায়ু এবং নদী ব্যবস্থা বন্যার জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বর্ষাকালে ভারী বৃষ্টিপাত, নদীর পানির স্তর বেড়ে যাওয়া, এবং পাহাড়ি ঢলের কারণে দেশে প্রায়ই বন্যা ঘটে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে বন্যার কারণে হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফসল ধ্বংস হয় এবং ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়।

বাংলাদেশের বন্যার পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:

১. ভৌগোলিক প্রেক্ষাপট:

বাংলাদেশে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদীর বিশাল অববাহিকা রয়েছে। এই তিনটি প্রধান নদী এবং তাদের উপনদীগুলো দেশের বড় একটি অংশজুড়ে প্রবাহিত। উজানের দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান থেকে নেমে আসা পানি বাংলাদেশের নদীগুলোর মাধ্যমে প্রবাহিত হয়, যা বন্যার অন্যতম প্রধান কারণ।

২. বন্যার সময়কাল:

বাংলাদেশে সাধারণত বর্ষা মৌসুম, অর্থাৎ জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্যার ঝুঁকি বেশি থাকে। এই সময়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এবং ভারত ও নেপালের পাহাড়ি অঞ্চলের পানিও বাংলাদেশের দিকে ধাবিত হয়, যার ফলে নদীগুলোর পানি বিপদসীমার ওপরে উঠে যায়।

৩. বন্যার ধরণ:

  • নদীভাঙন ও তীরবর্তী বন্যা: ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মা এবং মেঘনা নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলো প্রায় প্রতি বছর বন্যার কবলে পড়ে। নদীর পানি উপচে পড়লে নদীতীরবর্তী গ্রামগুলো তলিয়ে যায়।
  • ফ্ল্যাশ বন্যা: দেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে (সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা) হাওর এলাকায় হঠাৎ পাহাড়ি ঢল থেকে ফ্ল্যাশ বন্যা হয়।
  • নিম্নাঞ্চলীয় বন্যা: বরিশাল, খুলনা, সাতক্ষীরা অঞ্চলে জোয়ারের পানি এবং ঘূর্ণিঝড়ের কারণে উপকূলীয় এলাকায় নিম্নাঞ্চলীয় বন্যা ঘটে।

৪. ক্ষয়ক্ষতি:

  • ফসলের ক্ষতি: ধান, পাট এবং অন্যান্য কৃষিজাত ফসল বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষত বর্ষা মৌসুমের আমন ধান উৎপাদনে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়।
  • গবাদি পশু ও অবকাঠামোর ক্ষতি: বন্যার কারণে ঘরবাড়ি, সড়ক, সেতু, এবং বাঁধ ভেঙে যায়। এছাড়াও গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি প্রভৃতি বন্যায় হারিয়ে যায়।
  • স্বাস্থ্য ঝুঁকি: বন্যার পানি দূষিত হওয়ায় পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড ইত্যাদি রোগের বিস্তার ঘটে।

৫. প্রতিকার ও প্রস্তুতি:

  • আশ্রয় কেন্দ্র: বাংলাদেশ সরকার এবং বিভিন্ন এনজিও সংস্থা বন্যাকবলিত মানুষের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন করে।
  • বাঁধ নির্মাণ ও নদী খনন: নদীর তীরকে সুরক্ষিত করতে বাঁধ নির্মাণ ও নদী খনন করা হচ্ছে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই এসব উদ্যোগ পর্যাপ্ত নয়।
  • পুনর্বাসন: বন্যার পর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পুনর্বাসন এবং তাদের জীবিকা পুনরুদ্ধারে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ নেওয়া হয়।

৬. জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব:

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে বন্যার প্রকোপ আরও বাড়ছে। সাগরের পানির স্তর বৃদ্ধি, ভারী বৃষ্টিপাতের ফ্রিকোয়েন্সি এবং উজানের দেশের পানি ব্যবস্থাপনার অভাব বন্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে।

বাংলাদেশে বন্যা একটি নিয়মিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ, তবে সঠিক প্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব।

বন্যার উপকারিতা এবং অপকারিতা

বন্যা সাধারণত ক্ষতিকর হিসেবে বিবেচিত হলেও, এর কিছু উপকারিতাও রয়েছে। তবে, বন্যার ক্ষতির দিকগুলো অনেক বেশি প্রকট এবং তা মানুষের জীবন ও সম্পত্তিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। নিচে বন্যার উপকারিতা ও ক্ষতির আলোচনা করা হলো:

বন্যার উপকারিতা:

  1. মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি:
    • বন্যার পানির সাথে পলিমাটি বা পলল আসে, যা ফসলি জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। বিশেষ করে নদী তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে এই পলিমাটি জমে মাটি আরও উর্বর হয়।
  2. প্রাকৃতিক পানি সম্পদ পুনর্গঠন:
    • বন্যার ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর পূর্ণ হয়। এটি পানির অভাব পূরণে সহায়ক হতে পারে, বিশেষ করে খরা প্রবণ এলাকায়।
  3. অরণ্য ও জলাভূমির সুরক্ষা:
    • বন্যা বিভিন্ন জলাভূমি ও অরণ্যের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে। এতে এসব এলাকার জীববৈচিত্র্য টিকে থাকে এবং খাদ্যচক্র সুসংহত হয়।
  4. মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি:
    • বন্যার ফলে বিভিন্ন নদী ও জলাশয়ে মাছের প্রজনন ও বৃদ্ধি ঘটে। এতে মাছের উৎপাদন বাড়ে এবং মৎস্যজীবীরা উপকৃত হয়।
  5. নদী-নালা ও হ্রদ পরিষ্কার:
    • বন্যার পানির স্রোত নদী, খাল, ও হ্রদ থেকে পলি, আবর্জনা এবং অন্যান্য জমে থাকা উপাদান সরিয়ে দেয়, যা প্রাকৃতিক পানি প্রবাহ সচল রাখতে সাহায্য করে।

বন্যার ক্ষতি:

  1. জীবনহানি:
    • বন্যার ফলে অনেক মানুষ ও প্রাণীর মৃত্যু ঘটে। বিশেষ করে আকস্মিক বন্যায় মানুষ ও পশুপাখিরা আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ পায় না।
  2. ঘরবাড়ি ধ্বংস:
    • বন্যা প্লাবিত অঞ্চলে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, এবং সেতুসহ অন্যান্য অবকাঠামো ধ্বংস হয়। ফলে ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়।
  3. ফসল ও কৃষির ক্ষতি:
    • বন্যার কারণে কৃষিজমি ডুবে যায় এবং ফসল নষ্ট হয়। কৃষি অর্থনীতির উপর এর প্রভাব অনেক বড়, বিশেষ করে বন্যাপ্রবণ অঞ্চলে ধানের জমি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  4. রোগবালাইয়ের বিস্তার:
    • বন্যার পানি দূষিত হয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড ইত্যাদি রোগের বিস্তার ঘটে বন্যার পর।
  5. পরিবহন ব্যবস্থা ব্যাহত:
    • বন্যায় সড়কপথ, রেলপথ, এবং অন্যান্য পরিবহন ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এতে দেশের অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়।
  6. গবাদিপশু ও প্রাণিজগতের ক্ষতি:
    • বন্যার ফলে অনেক গবাদিপশু মারা যায় এবং প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি হয়। অনেক প্রাণী খাদ্য ও আশ্রয় হারিয়ে ফেলে।

বন্যার বিভক্তিকরণ

১. উৎস অনুযায়ী বন্যার বিভক্তিকরণ

২. প্রকৃতি অনুযায়ী বন্যার বিভক্তিকরণ

৩. প্রভাব অনুযায়ী বন্যার বিভক্তিকরণ

৪. সময়কাল অনুযায়ী বন্যার বিভক্তিকরণ:

উপসংহার

বন্যা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যা মানুষের জীবনযাত্রা, সম্পদ, এবং পরিবেশে গভীর প্রভাব ফেলে। যদিও বন্যার কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে, যেমন মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক জলাধারের পুনর্গঠন, তবে এর ক্ষতিকর প্রভাবগুলি অনেক বেশি জোরালো। ফসল ধ্বংস, জনজীবন বিপর্যস্ত করা, সম্পত্তির ক্ষতি, এবং রোগবালাইয়ের বিস্তার বন্যার সাধারণ ক্ষতিকর প্রভাব।

বাংলাদেশের মতো নদীবিধৌত এবং নিম্নাঞ্চলীয় দেশে বন্যার ঝুঁকি সবসময়ই বেশি থাকে। তবে আধুনিক প্রযুক্তি এবং সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং এর ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব। দীর্ঘমেয়াদী প্রস্তুতি, উপযুক্ত অবকাঠামো নির্মাণ, নদী খনন, এবং পরিবেশ রক্ষা করে বন্যার নেতিবাচক প্রভাব হ্রাস করা যেতে পারে। তাই, বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কমাতে এবং এর ইতিবাচক প্রভাবকে কাজে লাগাতে সরকার, স্থানীয় জনগণ, এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন। তাতে বন্যা কাকে বলে তা সম্পর্কে বুঝতে পারবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top