আজকের আর্টিকেলে আমরা সমাস এর অন্যতম একটি প্রকার বহুব্রীহি সমাস কি বা কাকে বলে? বহুব্রীহি সমাস কত প্রকার ও কি কি? ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তাহলে আর দেরি না করে চলুন শুরু করি।

বহুবিহি সমাস কি বা কাকে বলে?
বহুব্রীহি নাম দ্বারায় এর পরিচয় বুঝা যায়। ব্রীহি শব্দের অর্থ ধান। তবে এ শব্দটি দ্বাার বহু ধান বোঝায় না বরং বহু ধান আছে এমন ধনী ব্যক্তিকে বোঝায়। যে সমাসে সমস্যমান পদগুলোর কোনটির অর্থ না বুঝিয়ে, অন্য কোন পদকে বা অর্থ বোঝায় তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে।
বহুব্রীহি সমাসের ব্যাসবাক্যে সাধারণত যার, যাতে, যা ব্যবহৃত হয়। যেমনঃ নীল কন্ঠ যার – নীলকন্ঠ, সহ উদর যার – সহোদর, মহান আত্মা যার – মহাত্মা ইত্যাদি।
সমাস ব্যবহারের সুবিধা
সমাস বাংলা ভাষার ব্যাকরণে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি শব্দসংক্ষেপ এবং বাক্যের কার্যকর প্রকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সমাস ব্যবহারের সুবিধাগুলো হলো:
১. বাক্যকে সংক্ষিপ্ত করা:
সমাস ব্যবহারের মাধ্যমে একাধিক শব্দকে একত্রিত করে একটি শব্দে পরিণত করা যায়, যা বাক্যকে সংক্ষিপ্ত ও সহজ করে তোলে।
উদাহরণ:
গরুর দুধ → গোদুগ্ধ।
২. অর্থবোধকতা বৃদ্ধি:
সমাস ব্যবহারে শব্দগুলোর মধ্যে সম্পর্ক আরও সুস্পষ্ট হয়, ফলে বাক্যের অর্থ বোঝা সহজ হয়।
উদাহরণ:
অন্ন ও জল → অন্নজল।
৩. সৌন্দর্য বৃদ্ধি:
সমাস বাক্যকে সহজ, গঠনমূলক এবং সুন্দর করে তোলে, যা লেখার বা বক্তৃতার শৈলী উন্নত করে।
উদাহরণ:
যে দুঃখ দূর করা যায় না → অপরিহার্য দুঃখ।
৪. সময় ও শব্দের সাশ্রয়:
লিখতে বা বলতে কম সময় লাগে, কারণ সমাসের মাধ্যমে একাধিক শব্দকে একত্রে প্রকাশ করা যায়।
উদাহরণ:
গণনার জন্য যোগ্য → গণ্য।
৫. ভাবগাম্ভীর্য প্রকাশ:
সমাস ব্যবহারে শব্দগুলোতে একটি গাম্ভীর্যপূর্ণ এবং সাহিত্যিক ছোঁয়া পাওয়া যায়।
উদাহরণ:
যে মরণ শত্রুর দ্বারা সংঘটিত → বিরুদ্ধমরণ।
৬. শব্দের গঠনকে শক্তিশালী করা:
সমাস শব্দের গঠন আরও সংহত ও দৃঢ় করে, যা লিখিত ও কথ্য ভাষার গুণগত মান বাড়ায়।
উদাহরণ:
যে শক্তি স্বাভাবিক → স্বাভাবিকশক্তি।
সমাস ব্যবহারের মাধ্যমে ভাষা যেমন সংক্ষেপিত হয়, তেমনি তার সৌন্দর্য এবং অর্থবোধকতাও বৃদ্ধি পায়। এটি বাংলা সাহিত্য এবং যোগাযোগে একটি অপরিহার্য উপাদান।
বহুব্রীহি সমাসের প্রকারভেদ / শ্রেণীবিভাগ
বহুব্রীহি সমাস ৮ প্রকার। যথাঃ
- সমানাধিকরণ
- ব্যাধিকরণ
- মধ্যপদলোপী
- ব্যতিহার
- নঞ
- প্রত্যয়ান্ত
- অলুক ও
- সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি।
সমানাধিকরণঃ পূর্বপদে বিশেষণ পদ এবং পদপদে বিশেষ্য পদ হলে, তাকে সমানাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন –
- খোশ মেজাজ যার – খোশমেজাজ
- হত ভাগ্য যার – হতভাগ্য
ব্যাধিকরণঃ যে বহুব্রীহি সমাসের পূর্বপদ এবং পরপদের কোনটিই যদি বিশেষণ না হয় তাকে ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন –
- দু কান কাটা যার – দুকানকাটা
- পাপে মতি যার – পাপমতি
মধ্যপদলোপীঃ যে বহুব্রীহি সমাসে মাঝের বা শেষের এক বা একাধিক পদ লোপ পায়, তাকে মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি বলে। যেমন –
- ফুল তোলা আছে যাতে – ফুলতোলা
- হাতে খড়ি দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে – হাতেখড়ি
মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাসের উদাহরণ
- রাজধর্ম
- ব্যাখ্যা: যে ধর্ম রাজার জন্য উপযুক্ত।
- মধ্যপদ: “যা” লোপ পেয়েছে।
- অগ্নিসম
- ব্যাখ্যা: যে আগুনের মতো।
- মধ্যপদ: “যা” লোপ পেয়েছে।
- গুণবান
- ব্যাখ্যা: যে গুণে ভরা।
- মধ্যপদ: “যে” লোপ পেয়েছে।
- কমললোচন
- ব্যাখ্যা: যার চোখ পদ্মের মতো।
- মধ্যপদ: “যার” লোপ পেয়েছে।
- নীলকান্ত
- ব্যাখ্যা: যার কণ্ঠ নীল।
- মধ্যপদ: “যার” লোপ পেয়েছে।
- গিরিশিখর
- ব্যাখ্যা: যে শিখর পাহাড়ে রয়েছে।
- মধ্যপদ: “যা” লোপ পেয়েছে।
- অশ্বশক্তি
- ব্যাখ্যা: যে শক্তি অশ্বের মতো।
- মধ্যপদ: “যা” লোপ পেয়েছে।
- ধনবান
- ব্যাখ্যা: যে ধনে পরিপূর্ণ।
- মধ্যপদ: “যে” লোপ পেয়েছে।
বৈশিষ্ট্য
- মধ্যবর্তী শব্দ (যেমন: “যা”, “যে”, “যার”) প্রকাশিত না হলেও বাক্যের অর্থ স্পষ্ট থাকে।
- বহুব্রীহি সমাসে এমন শব্দ ব্যবহার করা হয় যা অন্য কোনো পদকে বোঝায়।
মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাস বাংলা ব্যাকরণের একটি অনন্য অংশ, যা শব্দগঠনে নিপুণতা ও সাহিত্যিক সৌন্দর্য প্রকাশ করে।
ব্যতিহারঃ ক্রিয়ার পারস্পরিক অর্থে ব্যতিহার বহুব্রীহি হয়। এ সমাসে পূর্বপদে আ এবং পরপদে ই যুক্ত হয়। যেমন –
- কানে কানে যে কথা – কানাকানি
- চুলে চুলে যে লড়াই চুলোচুলি
ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস এমন এক ধরণের বহুব্রীহি সমাস, যেখানে মূল পদের একটি অংশ ব্যবহৃত হয় না এবং অর্থের দিক থেকে অন্য পদের প্রতি ইঙ্গিত করে।
উদাহরণ:
১. অন্নপূর্ণা (যিনি অন্ন দ্বারা পূর্ণ, অর্থাৎ দেবী দুর্গা)।
২. নীলকণ্ঠ (যার কণ্ঠ নীল, অর্থাৎ শিব)।
৩. চক্রপাণি (যার হাতে চক্র আছে, অর্থাৎ বিষ্ণু)।
৪. চন্দ্রবানু (যার শরীর চন্দ্রের মতো উজ্জ্বল)।
৫. পুষ্পমালা (যার মালা ফুলের)।
নঞঃ পূর্বপদে না অর্থবোধক পদ থাকলে তাকে নঞ বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন –
- ন (নাই) জ্ঞান যার – অজ্ঞান
- অ (নাই) ধৈর্য যার – অধৈর্য
প্রত্যয়ান্তঃ যে বহুব্রীহি সমাসের সমস্তপদে আ, এ, ও ইত্যাদি প্রত্যয় যুক্ত হয় তাকে প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি বলে। যেমন –
- ঘরের দিকে মুখ যার – ঘরমুখো
- এক দিকে চোখ যার – একচোখা
অলুকঃ যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্ব বা পরপদের কোন পরিবর্তন হয় না, তাকে অলুক বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন –
- মাথায় পাগড়ি যার – মাথায়পাগড়ি
- পায়ে বেড়ি যার – পায়েবেড়ি
সংখ্যাবাচকঃ যে বহুব্রীহি সমাসের পূর্বপদে সংখ্যাবাচক শব্দ এবং পরপদে বিশেষ্য পদ থাকে তাকে সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি বলে। যেমন –
- দশ গজ পরিমাণ যার – দশগজী
- চৌ চাল যে ঘরের – চৌচালা
নিচে বহুব্রীহি সমাস সম্পর্কিত ৩৫টি গুরুত্বপূর্ণ এমসিকিউ প্রশ্ন এবং তাদের উত্তর দেওয়া হলো। এগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী হবে।
বহুব্রীহি সমাস নিয়ে এমসিকিউ প্রশ্ন
- বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে?
ক. যে সমাসে অর্থ অন্য পদে গমন করে
খ. যে সমাসে দুই পদের অর্থ অপরিবর্তিত থাকে
গ. যে সমাসে পরপদ অর্থ নির্দেশ করে
ঘ. যে সমাসে ক্রিয়া বোঝায়
উত্তর: ক. যে সমাসে অর্থ অন্য পদে গমন করে - বহুব্রীহি সমাসের প্রকারভেদ কয়টি?
ক. ২
খ. ৩
গ. ৪
ঘ. ৫
উত্তর: খ. ৩ - ‘হিমালয়’ শব্দটি কোন সমাস?
ক. তৎপুরুষ
খ. বহুব্রীহি
গ. দ্বিগু
ঘ. দ্বন্দ্ব
উত্তর: খ. বহুব্রীহি - ‘গজেন্দ্র’ শব্দটি কোন সমাস?
ক. তৎপুরুষ
খ. বহুব্রীহি
গ. দ্বন্দ্ব
ঘ. কর্মধারয়
উত্তর: খ. বহুব্রীহি - ‘অন্ধকার’ শব্দটি কোন সমাস?
ক. বহুব্রীহি
খ. তৎপুরুষ
গ. দ্বন্দ্ব
ঘ. দ্বিগু
উত্তর: ক. বহুব্রীহি - ‘চিরসবুজ’ শব্দটি কোন সমাস?
ক. তৎপুরুষ
খ. বহুব্রীহি
গ. দ্বিগু
ঘ. অভ্যয়ীভাব
উত্তর: খ. বহুব্রীহি - বহুব্রীহি সমাসের পারিভাষিক অর্থ কী?
ক. অন্যের সম্পদ
খ. বহুগুণ সম্পন্ন
গ. পরের অর্থ নির্দেশক
ঘ. পরম পবিত্র
উত্তর: গ. পরের অর্থ নির্দেশক - ‘অন্নপূর্ণা’ শব্দটি কোন সমাস?
ক. তৎপুরুষ
খ. বহুব্রীহি
গ. কর্মধারয়
ঘ. দ্বিগু
উত্তর: খ. বহুব্রীহি - ‘নীলগিরি’ শব্দটি কোন সমাস?
ক. তৎপুরুষ
খ. বহুব্রীহি
গ. দ্বিগু
ঘ. অভ্যয়ীভাব
উত্তর: খ. বহুব্রীহি - বহুব্রীহি সমাসে মূলত কতটি পদ থাকে?
ক. ২
খ. ৩
গ. ৪
ঘ. ১
উত্তর: ক. ২ - ‘অশোক’ শব্দটি কোন সমাস?
ক. তৎপুরুষ
খ. বহুব্রীহি
গ. দ্বিগু
ঘ. অভ্যয়ীভাব
উত্তর: খ. বহুব্রীহি - ‘মৃত্যুঞ্জয়’ শব্দটি কোন সমাস?
ক. বহুব্রীহি
খ. তৎপুরুষ
গ. দ্বন্দ্ব
ঘ. অভ্যয়ীভাব
উত্তর: ক. বহুব্রীহি - ‘পঞ্চপাণ্ডব’ শব্দটি কোন সমাস?
ক. বহুব্রীহি
খ. তৎপুরুষ
গ. দ্বিগু
ঘ. কর্মধারয়
উত্তর: ক. বহুব্রীহি - ‘কপিলমুনি’ শব্দটি কোন সমাস?
ক. তৎপুরুষ
খ. বহুব্রীহি
গ. কর্মধারয়
ঘ. দ্বিগু
উত্তর: খ. বহুব্রীহি - ‘নবজাতক’ শব্দটি কোন সমাস?
ক. তৎপুরুষ
খ. বহুব্রীহি
গ. অভ্যয়ীভাব
ঘ. দ্বিগু
উত্তর: খ. বহুব্রীহি - ‘সপ্তসাগর’ শব্দটি কোন সমাস?
ক. তৎপুরুষ
খ. বহুব্রীহি
গ. দ্বিগু
ঘ. অভ্যয়ীভাব
উত্তর: গ. দ্বিগু - ‘নীলনদী’ শব্দটি কোন সমাস?
ক. বহুব্রীহি
খ. তৎপুরুষ
গ. দ্বিগু
ঘ. অভ্যয়ীভাব
উত্তর: ক. বহুব্রীহি - বহুব্রীহি সমাসের বৈশিষ্ট্য কী?
ক. নিজস্ব অর্থ বোঝায়
খ. বাক্যে অর্থ বদলায়
গ. অন্য পদের অর্থ প্রকাশ করে
ঘ. শব্দের বিকল্প তৈরি করে
উত্তর: গ. অন্য পদের অর্থ প্রকাশ করে - ‘তাপস’ শব্দটি কোন সমাস?
ক. বহুব্রীহি
খ. তৎপুরুষ
গ. কর্মধারয়
ঘ. দ্বিগু
উত্তর: ক. বহুব্রীহি - ‘চক্রপাণি’ শব্দটি কোন সমাস?
ক. বহুব্রীহি
খ. তৎপুরুষ
গ. কর্মধারয়
ঘ. দ্বিগু
উত্তর: ক. বহুব্রীহি
বাকী প্রশ্নগুলো একনজরে
- ‘চন্দ্রবিন্দু’ শব্দটি → বহুব্রীহি
- ‘মহামানব’ শব্দটি → বহুব্রীহি
- ‘গিরিশ’ শব্দটি → বহুব্রীহি
- ‘জলধি’ শব্দটি → বহুব্রীহি
- ‘অজান’ শব্দটি → বহুব্রীহি
- ‘সর্বজ্ঞানী’ শব্দটি → বহুব্রীহি
- ‘অমূল্য’ শব্দটি → বহুব্রীহি
- ‘গিরিশিখর’ শব্দটি → বহুব্রীহি
- ‘গণেশ’ শব্দটি → বহুব্রীহি
- ‘সর্বহার’ শব্দটি → বহুব্রীহি
- ‘অজিত’ শব্দটি → বহুব্রীহি
- ‘অপর্ণা’ শব্দটি → বহুব্রীহি
- ‘দ্বিজ’ শব্দটি → বহুব্রীহি
- ‘অচেতন’ শব্দটি → বহুব্রীহি
- ‘সর্বাধিকারী’ শব্দটি → বহুব্রীহি
এই এমসিকিউগুলো বহুব্রীহি সমাসের গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য বুঝতে শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক হবে।
উপসংহার
তাহলে আজ এখানেই শেষ করছি। আশা করি বহুব্রীহি সমাস কি বা কাকে বলে? বহুব্রীহি সমাস কত প্রকার ও কি কি? সম্পর্কে কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছেন। আমাদের আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লাগলে অবশ্যই পরিবার-পরিজন এবং বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। খুব শীঘ্রই অন্য আরেকটি আর্টিকেল নিয়ে হাজির হব। ধন্যবাদ।